Blogs
বাংলাদেশে গাড়ি আমদানির জন্য প্রক্রিয়া কি ? সকল ধাপ ও কাগজ নিয়ে বিস্তারিত

বাংলাদেশে গাড়ি আমদানির প্রক্রিয়া বেশ জটিল এবং এতে বেশ কয়েকটি ধাপ ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টেশন জড়িত। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
গাড়ি আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় ধাপসমূহ
১. গাড়ি নির্বাচিত করা
- প্রথম ধাপে, আপনি যে ধরনের গাড়ি আমদানি করতে চান তা নির্ধারণ করতে হবে (যেমন, সেডান, SUV, ইত্যাদি)।
- গাড়ির মডেল, ম্যানুফ্যাকচারিং বছর, এবং মূল্য যাচাই করতে হবে।
- বাংলাদেশে গাড়ির বয়সসীমা সর্বোচ্চ ৫ বছর। এর বেশি পুরোনো গাড়ি আমদানি করা যায় না।
২. আমদানিকারক লাইসেন্স (Importer's Registration Certificate - IRC)
- গাড়ি আমদানির জন্য একটি বৈধ আমদানিকারক লাইসেন্স থাকা আবশ্যক।
- বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে লাইসেন্স নিতে হয়।
৩. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সংগ্রহ
আমদানি প্রক্রিয়া শুরু করার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট প্রস্তুত করতে হয়:
- প্রফর্মা ইনভয়েস (Proforma Invoice): বিক্রেতা বা সরবরাহকারী কোম্পানি থেকে গাড়ির বিবরণ ও খরচ উল্লেখ থাকে।
- শিপমেন্ট বিল অব লেডিং (Bill of Lading): এটি শিপিং কোম্পানি প্রদান করে।
- অরিজিনাল সেল সার্টিফিকেট (Certificate of Origin): গাড়ির উৎপত্তিস্থানের প্রমাণ।
- ইন্সুরেন্স পলিসি: শিপমেন্টের জন্য বীমা।
- পাসপোর্ট বা ব্যবসার আইডি (যদি ব্যক্তি হন):
- ব্যক্তি হিসেবে আমদানি করলে পাসপোর্ট।
- প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমদানি করলে ট্রেড লাইসেন্স ও ট্যাক্স আইডি।
-
৪. কাস্টমস প্রক্রিয়া
গাড়ি বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর এটি কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের জন্য পোর্টে জমা দিতে হয়।
- কাস্টমস মূল্যায়ন (Customs Valuation):
- গাড়ির শুল্ক নির্ধারণের জন্য আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য, শিপিং চার্জ, এবং বীমার উপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করা হয়।
-
- শুল্ক হার (Duty Rate):
- শুল্ক হার নির্ধারণ করা হয় গাড়ির ইঞ্জিন ক্ষমতা (CC) এবং ধরন অনুযায়ী।
- উদাহরণস্বরূপ:
- ১০০০ সিসি পর্যন্ত: প্রায় ২৫০%-৩০০%।
- ১৫০০ সিসি: প্রায় ৩৫০%-৪০০%।
-
-
- ডকুমেন্ট যাচাই: কাস্টমস কর্মকর্তারা সকল ডকুমেন্ট যাচাই করেন।
৫. শুল্ক ও ট্যাক্স পরিশোধ
কাস্টমস কর্তৃপক্ষ শুল্ক ও ট্যাক্সের একটি চূড়ান্ত মূল্য নির্ধারণ করবে। সাধারণত শুল্কের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে:
- আমদানি শুল্ক (Import Duty)।
- সম্পূরক শুল্ক (Supplementary Duty)।
- মূল্য সংযোজন কর (VAT)।
- অগ্রিম আয়কর (AIT)।
৬. গাড়ি রেজিস্ট্রেশন
কাস্টমস প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর গাড়িটি রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (BRTA) থেকে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট:
- কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সনদ।
- গাড়ির ইনভয়েস।
- ব্যক্তিগত বা প্রতিষ্ঠানের আইডি।
- রেজিস্ট্রেশন ফি।
গাড়ি আমদানিতে খরচের বিবরণ
নিম্নোক্ত চার্জগুলো প্রযোজ্য:
- গাড়ির প্রাথমিক দাম: গাড়ির আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য।
- শিপিং চার্জ: গাড়ি পরিবহন খরচ।
- ইন্সুরেন্স চার্জ: শিপিংয়ের সময় গাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বীমা।
- কাস্টমস ডিউটি: আমদানির জন্য প্রযোজ্য ট্যাক্স ও শুল্ক।
- BRTA রেজিস্ট্রেশন ফি।
গাড়ি আমদানির কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম
- গাড়ির বয়স সীমা: সর্বোচ্চ ৫ বছরের পুরনো গাড়ি আমদানি করা যায়।
- ইঞ্জিন ক্ষমতা: ৩০০০ সিসি’র বেশি ক্ষমতার গাড়ি আমদানিতে বিধিনিষেধ আছে।
- পরিবেশগত মান: আমদানি করা গাড়ির ইউরো-৪ বা ইউরো-৫ নির্গমন মান পূরণ করতে হবে।