এখন বাংলাদেশেই তৈরি হচ্ছে জনপ্রিয় Mitsubishi Xpander!

বাংলাদেশের অটোমোবাইল শিল্পের জন্য এক ঐতিহাসিক ও গর্বের মুহূর্তে, র্যাংকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (আরএআইএল) আনুষ্ঠানিকভাবে "বাংলাদেশে তৈরি" মিতসুবিশি এক্সপান্ডার (Mitsubishi Xpander) গাড়ির যাত্রা শুরু করেছে। সম্প্রতি গাজীপুরের কাশিমপুরে অবস্থিত র্যাংকন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়, যা দেশের বাজারে সাশ্রয়ী মূল্যে জাপানি প্রযুক্তির গাড়ি পাওয়ার সুযোগ তৈরি করেছে।
পারিবারিক ব্যবহারের জন্য ৭-সিটের এই মাল্টি-পারপাস ভেহিকলটি (MPV) ইতোমধ্যেই দেশের রাস্তায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এখন স্থানীয়ভাবে অ্যাসেম্বলি শুরু হওয়ায় এর দাম আগের থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে, যা মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে একটি মানসম্পন্ন পারিবারিক গাড়ির স্বপ্নকে আরও বাস্তব করে তুলবে।
ফ্যাক্টরি ও উৎপাদন প্রক্রিয়া:
গাজীপুরের কাশিমপুরে অবস্থিত র্যাংকন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে মিতসুবিশি মোটরস কর্পোরেশনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এই গাড়ির উৎপাদন কার্যক্রম চলছে। র্যাংকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজের এই প্ল্যান্টে একটি অত্যাধুনিক পেইন্ট শপ, অ্যাসেম্বলি লাইন এবং কঠোর মান নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাদা ইউনিট রয়েছে। মিতসুবিশির বৈশ্বিক মান (Global Standard) বজায় রাখতে প্রতিটি ধাপে জাপানি বিশেষজ্ঞদের দ্বারা স্থানীয় কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
গাড়ির স্পেসিফিকেশন ও ফিচার:
স্থানীয়ভাবে তৈরি হলেও এক্সপান্ডারের গুণগত মানে কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি। এর উল্লেখযোগ্য ফিচারগুলো হলো:
- ইঞ্জিন: ১.৫-লিটার (১৪৯৯ সিসি) MIVEC পেট্রোল ইঞ্জিন, যা ১০৫ হর্সপাওয়ার এবং ১৪১ নিউটন-মিটার টর্ক উৎপন্ন করে।
- ট্রান্সমিশন: ৪-স্পিড অটোমেটিক ট্রান্সমিশন।
- গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স: ২২০ মিমি, যা ভাঙা বা উঁচু-নিচু রাস্তার জন্য খুবই উপযোগী।
- আসন সংখ্যা: ৭টি আরামদায়ক আসন।
- অভ্যন্তরীণ ফিচার: ডুয়াল এসি, প্রশস্ত কেবিন, ফ্লেক্সিবল সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট এবং একটি আধুনিক টাচস্ক্রিন ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেম।
- নিরাপত্তা: ডুয়াল এয়ারব্যাগ, অ্যান্টি-লক ব্রেকিং সিস্টেম (ABS) সহ একাধিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
মূল্য এবং প্রাপ্যতা:
স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর দাম। আমদানিকৃত ইউনিটের তুলনায় বাংলাদেশে তৈরি এক্সপান্ডারের দাম বেশ খানিকটা কম।
- প্রাথমিক মূল্য: এর বেস বা ক্লাসিক ভ্যারিয়েন্টের দাম শুরু হচ্ছে ৩৪ লক্ষ টাকা থেকে।
- অন্যান্য ভ্যারিয়েন্ট: প্রিমিয়াম ও স্পোর্টস-এর মতো উচ্চতর মডেলগুলোর দাম যথাক্রমে ৩৫.৫ লক্ষ ও ৩৬.৫ লক্ষ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রতিটি গাড়ির সাথে গ্রাহকরা পাচ্ছেন ৫ বছরের ওয়ারেন্টি এবং ২ বছরের ফ্রি সার্ভিসিং এর নিশ্চয়তা।
শিল্পের জন্য তাৎপর্য:
"বাংলাদেশে তৈরি" মিতসুবিশি এক্সপান্ডার শুধু একটি গাড়ি নয়, এটি দেশের শিল্পায়নের পথে একটি বড় পদক্ষেপ। এই উদ্যোগের ফলে স্থানীয় পর্যায়ে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে, প্রযুক্তি হস্তান্তর ঘটছে এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। র্যাংকনের এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশ এখন শুধু গাড়ি আমদানিকারক দেশই নয়, বরং মানসম্পন্ন গাড়ি উৎপাদনেরও সক্ষমতা রাখে।
যারা একটি নির্ভরযোগ্য, প্রশস্ত এবং সাশ্রয়ী পারিবারিক গাড়ি খুঁজছেন, তাদের জন্য বাংলাদেশে তৈরি মিতসুবিশি এক্সপান্ডার নিঃসন্দেহে একটি সেরা পছন্দ হতে চলেছে।